November 22, 2024, 6:53 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সৌদি আরবে ভিক্ষা করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে দুই হাতবিহীন আটক বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার মতিয়ার রহমান মন্টু ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল। সেই মতিয়ারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু তথ্য। জানা গেছে মতিয়ার যথেষ্ট সহায়-সম্পদের মালিক। বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা করা তার স্বভাব। এর পূর্বে ভারতে গিয়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে বোমা অভিযোগ রয়েছে বোমা বানাতে গিয়ে হাত হারানোর। রয়েছে দুটি মামলা।
মতিয়ারের বাড়ি মেরহপুর জেলার গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের বাসিন্দা।
গত ২২ জুন মতিয়ার ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন।
তিনি সৌদি আরবে যান ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেখানে ব্যাগেজ হারিয়ে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। পরে সৌদি পুলিশ বাংলাদেশী এমবেসীর মধ্যস্থতায় তাকে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়। এ ঘটনা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মেহেরপুরসহ সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় বিব্রত তার ছেলে মেয়েরা ও আত্মীয়স্বজন।
সামাজিক যোগাযোগে তাকে ট্রল করা হচ্ছে মেহেরপুরের আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক বলে।
এ ঘটনায় ২৫ জুন ঐ ট্র্যাভেল এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মতিয়ারের এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় গ্রামে মতিয়ারের রয়েছে প্রায় ১০/১২ বিঘা জমি। যা তিনি পেয়েছেন পারবারিক সূত্রে। তার বড় ভাই আতিয়ার রহমান রহমান জানান মতিয়ারের এসব ধানী জমিতে ফসল ফলে এবং চার সন্তান নিয়ে একজন সচ্ছল মানুষ।
মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন জানান তার স্বামী হজ পালন করতে গিয়েছেন। সেখানে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি জানান এ পর্যন্ত মতিয়ার চারবার হজে গেছেন। কোনবারই এমন ঘটনা ঘটেনি।
মতিয়ারের চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলের বয়স ১৪। তারপর তিনটি কন্যা সন্তান।
তিনি জানান, মতিয়ার ভারত হয়ে সৌদিতে যেতেন। ভারত এবং বাংলাদেশ হয়ে অনেকবার হজ ভিসায় সৌদি আরবে গেছেন মন্টু। তবে বিদেশে গিয়ে স্বামী কী করেন, তা জানা নেই বলে দাবি করেন মমতাজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে মতিয়ার একসময় ডাকাত দলের সাতে জড়িত ছিলেন। ২০০৬ সালের দিকে বোমার আঘাতে দুই হাতের কবজি হারানোর পর ডাকাতির পেশা ছেড়ে দেন। বাড়িতে ভাইবোনদের সাথে পিতার জমি ভাগ করে নেন।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান মতিয়ারের বিষয়ে অনুসন্ধান করে তিনি জানতে পেরেছেন মতিয়ার ৬বার হজে গিয়েছেন সেখানে হজের সময়টিতে তিনি ভিক্ষা করেন। প্রতিবারই প্রায় ১৫/২০ লাখ করে টাকা উপার্জন করে দেশে ফেরেন তিনি। এক পর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। এরপর হজের নাম করে সেখানে ভিক্ষাবৃত্তি করেন।
একই উনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক আহমেদও এ ঘটনার সত্যতা নিরুপণ করেন। তিনি বলেন প্রতি বছর ৫-৭ লাখ টাকা ব্যয় করে হজ ভিসায় সৌদি যান মতিয়ার। গ্রামে ফিরে প্রথমেই তিনি জমি কেনেন। এভাবে ৩৫-৪০ বিঘা জমি কিনেছে।
গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মতিয়ারের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে ২০১০ও ২০১২ সালে গাংনী থানায় দুটি মামলা হয়। কুষ্টিয়া থানায়ও তার নামে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে ইতোমধ্যে খালাস পেয়েছেন তিনি।
Leave a Reply